বিভেদ নয়, ঐক্যের হোক বাংলাদেশ: ২০২৫ সালের নববর্ষে ৫টি অগ্রাধিকার কাজ
নতুন বছরের সূচনা হলে পুরনো সব কিছুকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশিত হয়। ২০২৫ বছরটি এমন এক সময় বাংলাদেশে এসেছে যখন দেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে দাঁড়িয়ে। স্বৈরাচারী শাসনকে বিদায় জানিয়ে গণতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের মানুষ আজও একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে। এটি একটি স্বপ্ন যেখানে বিভেদ-বিভাজন নয়, বরং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে—যে ঐক্যের ভিত্তি তৈরি হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানে। এই বছরের মর্মবাণী তাই স্পষ্ট, 'বিভেদ নয়, ঐক্যের হোক বাংলাদেশ।'
২০২৪ সালের এক নজরে
গত বছরটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রবাহের বছর। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘ডামি’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ড, এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই, এমপি আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ড, ঘূর্ণিঝড় রেমাল, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীরের পুকুরচুরি, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। বছরের শেষ দিন, ৩১ ডিসেম্বর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি আয়োজন করে, যা নতুন বছরের জন্য উদ্দীপ্ত একটি বার্তা নিয়ে আসে।
শেখ হাসিনার বিদায়: রাজনীতির নতুন অধ্যায়
শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১২ সাল থেকে, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করা হয়। ২০১৮ সালের মধ্যরাতের নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এক নতুন ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘ সময় ধরে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকারের কঠোর দমন-পীড়ন চলতে থাকে। তবে, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করছে, তাকে ফেরত এনে গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
২০২৫ সালের অগ্রাধিকার কাজ
১. গণহত্যার বিচার: ২০২৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানি চলছে এবং সরকার জানায়, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হবে।
২. ত্রয়োদশ নির্বাচন: ২০২৫ সালের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী রোডম্যাপের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, নির্বাচনের তারিখ ও বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনও অজানা। বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ কী ভূমিকা নেবে, তা দেখার বিষয় হবে।
৩. রাষ্ট্র সংস্কার: সরকার ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এই সংস্কারের সুপারিশ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সামনে আসবে। তবে, এসব সংস্কারের ফলাফল নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান হতে পারে না।
৪. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: গত বছর সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকবে। বিশেষত, সরকারের উদ্দেশ্য আগামী জুনে মূল্যস্ফীতি ৭% এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ৫% এ নামিয়ে আনার।
৫. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি: গত বছর আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও, সমাজে সংঘর্ষ, হামলা, লুটপাট, এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালে জনসাধারণ প্রত্যাশা করে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে কার্যকরভাবে।
জাতীয় ঐক্য এবং সংকটের সময়
২০২৪ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূস জাতির ঐক্য এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানান। দেশের সকল পক্ষকে একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বক্তৃতা দেন। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা।
উপসংহার: নতুন বছর, নতুন আশা
২০২৫ সাল বাংলাদেশের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। রাজনৈতিক ঐক্য, সংস্কার, এবং জনগণের জন্য সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রের ভিত্তিতে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মধ্যে সমঝোতা এবং সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’—এই চেতনায় এগিয়ে যেতে হবে, যাতে দেশের জন্য একটি শঙ্কামুক্ত, স্বস্তির এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করা যায়।
1 Comments
আমরাও আশাবাদী এবার ভালো কিছুই হবে।
ReplyDelete